লালমনিরহাটে চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় এবছর প্রচুর পরিমাণ জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ভূট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমেও ভূট্টার বাম্পার ফলন আশা করছেন ভূট্টা চাষিরা। বাম্পার ফলন ও ভাল বাজারদর পেলে এবারও ভূট্টাচাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটবে এমনটাই মনে করছেন অনেক।বিগত বছরগুলোতে ভূট্টা চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ আবাদ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঠে মাঠে ভূট্টা লাগানো এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা।প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটি ভূট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী । সরকার নজর দিলে ভূট্টা চাষেই পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র।

জানা গেছে, বর্তমানে ভূট্টার বীজ শতভাগ আমদানি নির্ভর। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে ভূট্টার আবাদ হলেও এর বীজ উৎপাদনে সরকারী বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেই। আর বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বীজের দামও দেশে উৎপাদিত ভূট্টার প্রায় ৫০গুণ বেশি।

অর্থাৎ ভূট্টা ওঠার সময় প্রতি ৪০কেজি সাড়ে ৪শত টাকা দরে চাষিরা বিক্রি করলেও এখন বীজ কিনছে প্রতি কেজি ৪শত ৮০ থেকে ৫শত ৫০টাকা। আবার বিভিন্ন সময়ে বেশি দামে এসব বীজ কিনে চাষীরা প্রতারিত হয়। তাই সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে দেশে ভাল বীজ উৎপাদন হলে চাষীরা উপকৃত হবে। দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিভিন্ন দেশ থেকে ভূট্টা বীজ আমদানী করতে হয়। ৭/৮বছর যাবৎ দেশের উৎপাদিত ভূট্টা দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করে এবং আমাদের দেশের উৎপাদিত ভূট্টাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ভূট্টার বহুমুখী ব্যবহার শুরু হওয়ায় এর চাহিদাও দিন দিন বেড়েছে।

 

এই মৌসুমে মোট কৃষি জমির অর্ধেকরও বেশি জমিতে ভূট্টার আবাদ করেছে এলাকার চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়ায় ভূট্টার বাম্পার ফলন ও সেইসাথে ভাল বাজারদর পেয়ে ভূট্টাচাষিরা লাভবান হবে। অন্যান্যদের মতো এবারও লাভের আশায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ভূট্টাচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় চলতি বছর বিভিন্ন জাতের ভূট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় মোট জমির পরিমাণ ছিল ৩০হাজার ৫শত হেক্টর জমি। কিন্তু এ পর্যন্ত ভূট্টার আবাদ হয়েছে ২৫হাজার ৯শত ৬৫হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন ও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ২ হাজার ৪০জন কৃষককে ভূট্টা বীজ ২কেজি, ডিএপি ২০কেজি, এমওপি ১০কেজি করে প্রত্যেককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদান করা হয়।

ভুট্টা চাষী মোঃ রহুল আমিন, দুখু মিয়া, এরশাদুল হক বলেন, আমরা প্রতি বছর ভুট্টার চাষ করে থাকি। গত বছর ভুট্টা উঠার সাথে সাথে ভাল দামে ভুট্টা বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলাম। আহের আলী বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। গাছও ভাল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভাল হবে আশা করছি। ফলন ও দাম ভালো পেলে গতবারের মতো এবারও চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে। ভূট্টা আবাদে সময় ও খরচ কম লাগে এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ আবাদে ঝুঁকিও কম। ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে অন্য ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হলেও এ ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হয় না। এবার ফসল ওঠার আগে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে চাষিরা বিঘাপ্রতি ২৭ থেকে ৩০ মণ ভূট্টা ঘরে তুলতে পারবেন। বাজারে চাহিদাও ভাল দাম থাকলে গতবারের মতো এবারও লাভবান হতে পারবেন। চাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, দেশে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ভূট্টার আবাদ হলেও এর বীজ উৎপাদনের ব্যাপারে সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেই। বর্তমানে ভূট্টা বীজ শতভাগ আমদানিনির্ভর। আর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে চটকদার মোড়ক দেখে বেশি দামে খারাপ বীজ কিনে চাষিরা প্রতারিত হন। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগে দেশে ভাল বীজ উৎপাদন হলে চাষিরা উপকৃত হবে। বর্তমানে দেশে ভূট্টার বহুমুখী ব্যবহার শুরু হওয়ায় এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আগে দেশে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু হলে মুরগির খাবার হিসাবে প্রথম দিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করতে হতো। ৬/৮ বছর যাবৎ দেশের উৎপাদিত ভূট্টা দিয়ে সে চাহিদা পূরণ হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশের উৎপাদিত ভূট্টাই রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এছাড়া ভূট্টা ও ভূট্টাগাছের কোন অংশই ফেলনা যায়না। এর কাঁচা পাতা গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। শুকনা গাছ ও মোচার ফেলে দেয়া অংশ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। অনেকে মনে করেন, ভূট্টার শুকনা গাছ ও মোচার ভিতরের অংশ দিয়ে কাগজ, পারটেক্স ও চারকোল তৈরির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে ভূট্টার শুকনা গাছ দিয়ে কাগজ বা পারটেক্স তৈরি করে দেশের চাহিদা মেটানো সেইসাথে চারকোল তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।